জেলার সোনাগাজীতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলেও পল্লীবিদ্যুতের একটি ফিডারে যোগ হয়ে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা হলেও মেটাচ্ছে। ফেনীর মহুরী নদীর তীর ও সোনাগাজী চরাঞ্চল ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ৬ একর জমির উপর স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০০৫ সালে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সাত বছর উৎপাদন বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হয়েছে। চালু হওয়ার পর থেকে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫২ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে পিডিবির প্রজেক্টের আওয়তায় প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে চারটি টারবাইন দিয়ে বাতাস কাজে লাগিয়ে ২২৫ কিলোওয়াট করে ৯শ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটির সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ০.৯০ মেগাওয়াট। এ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইন দিয়ে প্রায় এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হতো। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালানোর জন্য যৎসামান্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন হওয়ায় তৎকালীন সময়ে স্থানীয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি থেকে একটি ১১/০.৪ কেভি লাইনের সংযোগ নেয়া হয়। বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানির জন্য স্থাপন করা হয় টু ওয়ে মিটার। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলেও ২০০৬ সালের শুরুতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ফেনী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং সেই থেকে ফেনী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির লাইনের যুক্ত হয় উৎপাদিত বিদ্যুৎ। ২০০৭ সালে কারিগরি ক্রুটি, অব্যবস্থাপনা ও পর্যাপ্ত বাতাস না থাকায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। পরবর্তীতে কিছুটা মেরামত করে ২০১৪ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় চালু হয়। ফেনী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান জানান, ২০১৪ সালে মোট উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৪শ ৩৯ ইউনিট। গড় উৎপাদন ১৬ হাজার ৮৩০ ইউনিট (কি.ও.আ.)। ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট উৎপাদন ১ লাখ ৫১ হাজার ৬১৩ ইউনিট। গড়ে ১৩ হাজার ৭৮৩ ইউনিট (কি.ও.আ.)। ফেনী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সোনাগাজী জোনাল অফিসের ১নং ফিডারের মাধ্যমে ফেনী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। এ পর্যন্ত উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৯.৯৬ টাকা। ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্পটি একটি প্রাইভেট প্রকল্পের মতো। এটির জেনারেশন সামান্য। সাফিসিয়েন্ট উইন্ড পাওয়ার যখন থাকে না তখন কম জেনারেশন পাওয়া যায়। আর যখন সাফিয়েন্ট উইন্ড পাওয়ার থাকে তখন জেনারেশন পাওয়া যায়। সাফিয়েন্ট উইন্ড পাওয়ার না থাকাতে প্রকল্পটি ছোট আকারে চলছে। ফেনী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি আবদুল মোতালেব জানান, যেহেত সোনাগাজীর চরাঞ্চল ও সাগরের মোহনায় এই বায়ুবিদ্যুৎটি স্থাপন করা হয়েছে সুতরাং বায়ুর গতিবেগ পুনরায় তদন্ত ও পরিমাপ করে আরো সুন্দর প্রকল্প করা যেতে পারে। এই উৎপাদনে দৈনন্দিন কোনো খরচ নেই। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য এটি সাশ্রয়ী হবে। বর্তমানে যে চারটি টারবাইন আছে সেগুলোতে ভালো জেনারেশন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি ভবিষ্যতে উইন্ড প্লো থেকে বিদ্যুৎ পেতে হলে নতুন করে আরো পিজিবিলিটি স্টাডি করে তাতে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে উইন্ড পাওয়ার পরিকল্পনা করা হোক।